এছাড়াও বন্দর-পতেঙ্গা ভিআইপি সড়কে এক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ যানজটের কারণে বন্দর থেকে সড়ক পথে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন অনেকটা বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চীফ পার্সোনাল অফিসার মো.নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। দিনে প্রায় পাঁচহাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করে এবং বের হয়। কিন্তু চলমান সংকটের কারণে সেটা অনেক কমে গেছে। পণ্য খালাস স্বাভাবিক না থাকায় বন্দরে প্রভাব পড়েছে।’
বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের বিকল্প পথে কন্টেইনার পরিবহনের দাবি আবারও জোরালো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল আলম বলেন, সড়কে যানজটের কারণে বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই সড়ক পথে নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প পথে কন্টেইনার পরিবহনের প্রস্তাব আমরা বন্দরকে অনেক আগেই দিয়েছি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের সক্ষমতাকে আরও আধুনিক ও গতিশীল করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘ঈগলরেল কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এক বছর আগে। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে কন্টেইনার মুভমেন্টের পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
আমেরিকান কোম্পানি ঈগলরেলের কয়েকজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে দুই দফা চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে গেছেন। তারা ঈগলরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ‘ঈগলরেল ব্যবহার যাচাই করতে আমেরিকার আরও একটি শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামে আসবে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ঈগলরেল চালুর পদক্ষেপ নেবে। অনেকটা কেবল কারের মতো ঈগলরেল অন্তত ৫০ ফুট ওপরে স্টিল স্ট্রাকচারের ট্র্যাকে কন্টেইনার স্থানান্তর করে থাকে।
প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বে-টার্মিনাল পর্যন্ত ঈগলরেলের দুটি ট্র্যাক স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে। এ দুটি ট্র্যাক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার বেটার্মিনালের ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখান থেকে কন্টেইনার সরবরাহ দেওয়া হবে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ টিইইউএস কন্টেইনার মুভমেন্ট করা যায়। সেখানে ঈগলরেলে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩০০ টিইইউএস কন্টেইনার মুভমেন্ট করা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, ‘এটি খুবই ভালো একটি প্রকল্প। এটি যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাহাজের হুক পয়েন্ট থেকে ডেলিভারি পয়েন্টে কিংবা রিসিভিং পয়েন্ট থেকে জাহাজের হুক পয়েন্টে ঈগল রেলের সাহায্যে কন্টেইনার আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে বন্দর অভ্যন্তরে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে হবে না। বর্তমানে বন্দর অভ্যন্তরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেইনার মুভারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি প্রবেশ করছে। এ গাড়ির প্রভাবে বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর বিস্তৃত এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈগলরেল চালু হলে বন্দরকেন্দ্রিক এই যানজট থেকেও মুক্তি মিলবে।